দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে কুড়িয়ে পাওয়া রাজকুমারির মূল্য নিধারণ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। জামালপুরের পারিবারিক সহকারি জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ফারহানা আক্তার রাজকুমারির নামে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে ব্যাংক রশিদ জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এই শর্ত মেনে নেওয়ায় বকশীগঞ্জের সুমন দম্পতিকে ৪৫ দিনের জন্য অস্থায়ী অভিভাবক মনোনীত করেছেন আদালত।
জানা যায়, ২৯ মার্চ বকশীগঞ্জ শ্মশান ঘাটে কে বা কারা দুই দিন বয়সী নবজাতক এক কন্যা শিশুকে রেখে পালিয়ে যায়। কান্নাকাটির শব্দ শুনে প্রতিবেশি আছর আলীর স্ত্রী সন্ধ্যি বেগম শিশুটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে প্রাথমিক পরিচর্যা করেন। পরে বকশীগঞ্জ থানার পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। কুড়িয়ে পাওয়া ফুটফুটে নবজাতক শিশুটির নাম রাখা হয় রাজকুমারি।
এই নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে একাধিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ভ্যানচালক থেকে হাই সোসাইটির একাধিক ব্যক্তি বা পরিবার রাজকুমারির সার্বিক দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। সর্বশেষ রাজকুমারীকে পেতে জামালপুরের পারিবারিক আদালতে পৃথক ২টি মামলা দায়ের হয়। একটি মামলা দায়ের করেন বকশীগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা ব্যাংকার সামিউল হকের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন রিপা। অপর মামলা দায়ের করেন বকশীগঞ্জ পৌর শহরের কামারপট্টি মোড়ের ভ্যান চালক সুমন মিয়া। উভয় বাদী রাজকুমারির অভিভাবকত্ব নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ব্যাংকার সামিউল হকের স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন রিপার পক্ষে সাক্ষ্য দেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়। সুমন মিয়ার পক্ষে সাক্ষ্য দেন বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জুমান, বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর ও মহিলা কাউন্সিলর রহিমা।
আইন লড়াইয়ের পর ২০ মে সোমবার জামালপুরের পারিবারিক আদালতের বিজ্ঞ সহকারি জজ ফারহানা আক্তার রাজকুমারী মামলার রায় দেন। রায়ে সিটি ব্যাংকে রাজকুমারীর নামে ২০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটসহ ৩টি বিশেষ শর্তে সুমন দম্পতিকে অভিভাবক মনোনীত করা হয়। টাকা জমা দেওয়াসহ ব্যাংকের যাবতীয় কাজ শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ৪৫ দিন।
মামলায় ফারহানা ইয়াসমিন রিপার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জামালপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ ও অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন সিরাজী। সুমন দম্পতির পক্ষে ছিলেন সাবেক পিপি মাহফুজুর রহমান মন্টু ও সিনিয়র এডভোকেট আনিসুজ্জামান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন